বগটুই কান্ড নিয়ে এবার শাসক দলের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে গেল। এই ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে। তার নির্দেশেই গোটা ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন গ্রামবাসী থেকে শুরু করে অনেকেই আর এবার এই আনারুল কে নিয়েই বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং দলের প্রবীন নেতা এবং বিধায়ক আশিস বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে শুরু হল তরজা।
এমনিতেই অনুব্রত মণ্ডলের সাথে আশিস বন্দোপাধ্যায়ের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। একাধিকবার বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। একবার এক জনসভায় সকলের সামনেই আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কে ‘অপদার্থ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, তারপর দুজনে প্রকাশ্যেই বাদানুবাদে জড়িয়েছিলেন। তবে দলের স্বার্থে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে একসাথেই কাজ করছিলেন অনুব্রত মণ্ডল এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। একসাথে দলের বিভিন্ন কাজে যাচ্ছিলেন তারা, কিন্তু আনারুল হোসেনকে নিয়ে ফের একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করেছেন দুজন।
অনুব্রত মণ্ডল সম্প্রতি জানিয়েছেন তিনি লোকসভা ভোটের পর ভেবেছিলেন আনারুলকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবেন এবং সেই মত মন্সথির করে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি, কিন্তু সেই সময় আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন আনারুলকে পঞ্চায়েত নির্বাচন অবধি পদে রাখা হোক। দলের প্রবীন নেতা এবং বিধায়ক আশিস বন্দোপাধ্যায়ের কথা শুনেছিলেন কিন্ত এখন তিনি মনে করেন তখন তাকে বাদ দিলেই ভালো হত। সেই চিঠিও একটি সংবাদপত্রের কাছে প্রকাশ্যে এসেছে ফলে দলের অনেকেই অবাক। অবশ্য অনুব্রত মণ্ডল এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনেই চিঠির বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। আশিস বাবুর যুক্তি, নিজের এলাকায় সাংগঠনিক কাজে বেশ দক্ষ আনারুল তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন অবধি তিনি তাকে নিজের পদে বহাল রাখার জন্য অনুব্রত মণ্ডলের কাছে অনুরোধ করেছিলেন সকলের মতামত নিয়ে, এতে ভুল কিছু নেই, তবে অনুব্রত মণ্ডল চাইলে আনারুলকে হামেশাই সরিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছেন তিনি আগে থেকে আঁচ করেছিলেন এমন ভয়ংকর কিছু করতে পারে আনারুল। কার্যত আশিস বাবুর ওপরেই তিনি সব দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন।
বগটুইই কান্ডের পর থেকেই কোনঠাসা অনুব্রত মণ্ডল। তিনি ঘটনার পর দিন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন শট সার্কিট থেকে টিভি বাস্ট করেই এই ঘটনা ঘটেছে কিন্তু তা যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তা রাজ্যের পুলিশ এবং খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিত করেছেন ফলে এই গোটা ঘটনায় তার কোন হাত আছে কি না বা আনারুলের সাথে তার সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে। এই অবস্থায় নিজের ছবিকে সাদা করতে আনারুলকে সরানোর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে আপাতত দল আনারুল কে ঝড়ে ফেলতে চাইছে বলেই জানিয়েছেন অনেকে।
প্রথম জীবনে রাজমিস্ত্রি ছিলেন আনারুল হোসেন, তারপরে শাসক দলের নেতা হন এবং ক্রমে ব্লক সভাপতি। সবমিলিয়ে আনারুল হোসেনের এই উত্থানের পেছনে যে নানারকম অপরাধমূলক কাজকর্মের যোগ আছে তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু এখন তিনি বেকায়দায়, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন ফলে এত সহজে সুবিধা করতে পারবেন না। পাশাপাশি তাকে নিয়ে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে তরজা। সবমিলিয়ে আনারুল এখন তৃণমূলের অস্বস্তির মূল কারণ।
The post বগটুই কাণ্ডে আনারুল হোসেনকে নিয়ে শাসক দলের দুই নেতার মধ্যে তরজা শুরু কোণঠাসা অনুব্রত appeared first on Kolkata Gossip.
from Kolkata Gossip https://ift.tt/3twFgbR
No comments:
Post a Comment