
কলকাতা : ঘূর্ণিঝড় যশের জেরে বেলা ১২টা নাগাদ কলকাতায় স্থানীয়ভাবে টর্নেডোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। বুধবার নির্ধারিত সময়ের আগেই ওড়িশার ধামড়ায় স্থলভাগে আছড়ে পড়েছে যশ বা ইয়াস (Cyclone Yaas)। যার প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। দিঘায় উত্তাল হয়েছে সমুদ্র। সাগরে কপিল মুনির আশ্রম জলমগ্ন। কিন্তু ধামড়ায় ল্যান্ডফল হলেও সম্পূর্ণ স্বস্তি পাচ্ছে না কলকাতার মানুষ (Kolkata)। কারণ আবহবিদরা জানিয়েছেমন, বেলা ১২টা নাগাদ কলকাতায় স্থানীয়ভাবে টর্নেডোর সম্ভাবনা রয়েছে। আজ, বুধবার পূর্ণিমার কারণে ভরাকোটালের জেরে সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট নাগাদ জলোচ্ছ্বাস সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছবে। যশের জেরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এয়ার পকেট। আর এই দুয়ের জেরেই টর্নেডোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার মানুষদের বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন।
গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর এবং হুগলির চূঁচুড়ায় বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ আচমকা টর্নেডো হয়। এর ফলে এই দুই এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করার সময় এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হালিশহর ও চূঁচুড়ায় টর্নেডোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে দুটো জায়গায় প্রায় ৪০ টি করে বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু দোকানের ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে আমরা পারবো না। তবে ক্ষয় ক্ষতি হলে রাজ্য সরকার বিপন্নদের পাশে আছে।”
এদিকে এই প্রসঙ্গে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সহ অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “সাইক্লোনের সঙ্গে সেমি সাইক্লোন বা এই জাতীয় টর্নেডো তৈরী হয়। তবে ইয়াস যেখানে আছড়ে পড়ার কথা তার চাইতে ২০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতা অবস্থিত। এখানে এভাবে টর্নেডো হওয়াটা নিয়ে ভাবনা হওয়ার কথা।”
আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলেন, টর্নেডো তৈরি হয় অনেকটা কালবৈশাখীর নিয়ম মেনে। সমুদ্র থেকে গরম জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস সমতলে ঢুকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এক সময়ে তা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। আর তার থেকেই তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। উল্লম্ব মেঘ উচ্চতায় বাড়তে থাকে এবং এক সময় সেই মেঘ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয় কালবৈশাখী। টর্নেডো তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটাও প্রায় একই রকম। তবে এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের জটিলতায় দীর্ঘকায় উল্লম্ব মেঘের ভিতরে ঘূর্ণি তৈরি হয়। সেই ঘূর্ণি একটি সরু ফানেলের আকারে বা হাতির শুঁড়-এর মতো আকৃতির মতো হয়ে নেমে আসে মাটির কাছাকাছি। আর মাটি ছুঁয়েই সেই দৈত্যাকৃতি ঘূর্ণায়মান ফানেল তার কেন্দ্রের দিকে সব কিছু টেনে নেয়। তার ফলে ওই ঘূর্ণায়মান ফানেল যে এলাকা দিয়ে যায় সেখানেই ধ্বংসলীলার স্বাক্ষর রেখে যায়। তবে কোন মেঘপুঞ্জ শেষ পর্যন্ত টর্নেডোতে রূপান্তরিত হবে, এখনও সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না আবহবিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর কোথায় কোথায় টর্নেডো বেশি হয়?
পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং আমেরিকায় মেক্সিকান খাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় সাধারণত টর্নেডো হয়। কেন এই সব এলাকায় বেশি টর্নেডো তৈরি হয়? টর্নেডোর উল্লম্ব মেঘ তৈরি করে তিনটি জিনিস। প্রথমত সমুদ্রের জলীয় বাষ্পপূর্ণ গরম বাতাস। দ্বিতীয়ত বরফে ঢাকা পাহাড় থেকে
আসা শুকনো, ঠান্ডা বাতাস। আর এই দুই বায়ুপ্রবাহ একে অপরের সংস্পর্শে আসার জন্য মালভূমি এলাকা।
পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস ঢোকে পরিমণ্ডলে। শুকনো, ঠান্ডা বাতাস আসে হিমালয় থেকে। আর ছোটনাগপুরের মালভূমিতে সাধারণত ওই দুই বায়ুপ্রবাহের মিলন হয়। এর থেকেই টর্নেডো হয়।
অন্য দিকে আমেরিকার ক্ষেত্রে জলীয় বাষ্পপূর্ণ গরম বাতাস ঢোকে মেক্সিকান খাঁড়ি থেকে। রকি মাউন্টেন থেকে আসে শুকনো, ঠান্ডা বাতাস। আর দুই বায়ুপ্রবাহের মিলন হয় রকি মাউন্টেন সংলগ্ন মালভূমিতে। এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা টর্নেডো সৃষ্টির বিষয়ে এই কারণেই জানিয়েছেন।
টর্নেডো কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে অধিকাংশই স্থায়ী হয় মিনিট দশেক।
The post BREAKING: কলকাতায় টর্নেডোর সতর্কতা appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/3wwTlky
No comments:
Post a Comment