
কলকাতা : প্রলয় কাকে বলে, সেটা দেখিয়ে দিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস (Cyclone Yaas)। বুধবার নির্ধারিত সময়ের আগেই ওডিশার ধামড়া (Dhamra) ও বালেশ্বরের (Balasore) মাঝে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সকাল সাড়ে ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ শুরু হয় ইয়াসের ল্যান্ডফল। তিন ঘণ্টা ধরে চলবে এই ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া। সাইক্লোনের একটা হেড এবং একটা টেল থাকে। হেডটি ল্যান্ডফলের সময় বালেশ্বেরে প্রবেশ করেছে। আর টেল অর্থাৎ লেজের অংশটি প্রবেশ করতে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সময় লাগবে। এমনটাই জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সহ অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Sanbib Bondyopadhyay)। এই হেডটি প্রবেশের সময় ঝড়ের বেগ ও বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। লেজের অংশটি অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ফের ঝড়ের দাপট বাড়বে বলে আবহাওয়া দফতর । তবে এর ফলে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে ।
বুধবার সকালে সাইক্লোনের ক্লাউড ওয়াল ঢুকতে শুরু করার সময় থেকেই ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব ক্রমেই বাড়তে শুরু করে। আর তার সঙ্গে চলে তুমুল বৃষ্টি ও সামুদ্রিক জলোচ্ছাস। আর এর ফলেই পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় থেকে ব্যাপক ভাবে ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। মুখ্যমপন্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “দুর্যোগের প্রভাবে বিদ্যুৎ এবং জল পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে।”
এদিকে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যে মোট ১৭ কোম্পানি সেনা নামানো হয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি রাত জেগে নবান্ন থেকে পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়ার পরেই কলকাতায় টর্নেডোর আশঙ্কার কথা জানা যাচ্ছে নবান্ন সূত্রে । সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কলকাতার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। ইয়াস আছড়ে পড়ার ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। দিঘায় সকাল সাড়ে ৬টায় ইয়াসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার। আছড়ে পড়ার আগেই প্রভাব দেখাতে শুরু করে ইয়াস। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়াতেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসতে পারে জানার পরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ১০টি জেলায় নামানো হয় সেনা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পুরুলিয়া, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়ায় ১৭ কোম্পানি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সতর্কতায় আগে থেকেই সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিল রাজ্য সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিভিক ভলান্টিয়ার, অফিসার সহ ৩ লক্ষ পুলিশ মোতায়েত করা হয়েছে।
পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ইয়াস-এর প্রকোপ যাতে বড় রকমের ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য এক কথায় মাঠে নেমে কাজ করছে বিপর্যয় মোকাবিলা, পুরসভা, পঞ্চায়েত, পিডব্লুইডি, বিদ্যুৎ, সেচ, কৃষি দফতরের প্রায় ৭৪ হাজার কর্মী। মূলত প্রাণহানি রোখাই সরকারের মূল লক্ষ্য। এর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি যাতে কম নষ্ট হয়, নষ্ট হলেও যাতে দ্রুত মেরামত করা যায় তার জন্যও নিরন্তর চেষ্টা চলছে। এছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্পিড বোট, গাছ কাটার যন্ত্র, আম্বুল্যান্স। নবান্নের পাশাপাশি সব মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েত ও জেলায় জেলায় শাসকের অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ইতিমধ্যে সাড়ে ১১ লক্ষ লোককে সরিয়ে আনা হয়েছে নিরাপদ স্থানে। এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “প্রাণ গেলে কিছু করার থাকে না। আপনারা কেউ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বার হবেন না। সাবধানে থাকবেন। সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bondyapadhyay) আরও বলেছেন, “অনেকগুলি বাঁধ ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলার অনেকটাই প্লাবিত। ১৫ লক্ষ মানুষকে সরাতে পেরেছি। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, কলকাতা, সংলগ্ন জেলা হুগলি, নদিয়া, এই সমস্ত জায়গায় ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। উপকূলবর্তী এলাকায় হাওয়ার গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। বিভিন্ন জেলায় গাছ উপড়ে পড়েছে। নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত । দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৫টি বাঁধ ভেঙেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি বাঁধ ভেঙেছে। দিঘা থেকে দেড় লক্ষ লোককে সরানো হয়েছে। আরও লোক সরানোর চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক করোনা আক্রান্ত। সেই অবস্থাতেও কাজ করছেন। কলকাতায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও নিরবিচ্ছিন্ন। তবে ভরা কোটালের জন্য কী হবে জানি না। মোট সাড়ে ১১ লক্ষ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। ভরা কোটালের জন্য বাংলায় ক্ষতি বেশি হবে। প্রত্যেক বছর বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়। সরকার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধান থাকুন। ৭-৮ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হবে।”
এদিকে সকাল থেকেই দিঘায় সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছাস শুরু হয়েছে। দিঘা শহর ও গ্রামে জল ঢুকে পড়েছে। কাকদ্বীপে নদী বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে। ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা, কুলতলীতে যদি বাঁধ টপকে জল ঢুকে বিপত্তি সৃষ্টি করেছে।
The post ইয়াস-এর আঘাতে ক্ষতি রাজ্যের বহু জেলার appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/3flSHRf
No comments:
Post a Comment