
প্রসেনজিৎ চৌধুরী: কিছু একটা হয়েছে সার্কিট হাউসে। তবে কেমন যেন গুমসুমি পরিবেশ। ঝড় জলের ভোর রাতে বঙ্গোপসাগর অশান্ত। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসের পড়েছিল গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের (Bangladesh) রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (Ziaur Rahaman) দেহ।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে সকাল এমনই। বছর ছয়েক আগে ১৯৭৫ সালে ঢাকায় একইভাবে সেনা অভ্যুত্থানে খুন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অভিযোগ সেদিন অবশ্য সেনা আধিকারিক জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahaman) ছিলেন প্রায় নিষ্ক্রিয়। পরে তিনিই প্রেসিডেন্ট হন। তৈরি করেন বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party)
প্রেসিডেন্ট জিয়া তখন বাংলাদেশে প্রবল জনপ্রিয়। শাসন ক্ষমতার তুঙ্গে। ধিকিধিকি বিদ্রোহের আগুন জ্বলছিল সেনা বাহিনির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে। এর কেন্দ্র চট্টগ্রাম (Chattyagram) বিভাগীয় সেনা দফতর। বিদ্রোহ সামাল দিতেই জিয়ার চট্টগ্রাম সফর ছিল বলে মনে করা হয়
১৯৮১ সালের সেই ভোর রাতের ভয়াবহ পরিবেশের বর্ণনা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী। তাঁর বই ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক’ বিতর্কিত ও তীব্র আলোচিত। তিনি লিখেছেন, “ভোর ৪টার দিকে অফিসাররা অতর্কিতে সার্কিট হাউসে আক্রমণ করে। জুনিয়ার অফিসাররা নিজেরাই দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথমে সার্কিট হাউসে রকেট ল্যাঞ্চার নিক্ষেপ করে। পরে এক গ্রুপ গুলি করতে করতে ঝড়ের বেগে সার্কিট হাউসে ঢুকে পড়ে। গুলির শব্দ শুনে জিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসেন এবং কয়েকজন অফিসার তাঁকে ঘিরে দাড়ায়। ওই সময় লে. কর্নেল মতিউর রহমান মাতাল অবস্থায় টলতে টলতে ‘জিয়া কোথায়. জিয়া কোথায়’ বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসে এবং পলকেই গজ-খানেক সামনে থেকে তার চাইনিজ স্টেনগানের এক ম্যাগাজিন (২৮টি) গুলি জিয়ার উপর চালিয়ে দেন। অন্তত ২০টি বুলেট জিয়ার শরীরে বিদ্ধ হয় এবং পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়”।
প্রেসিডেন্ট জিয়া খুন হয়েছেন সংবাদে বাংলাদেশের সেনাবাহিনির অভ্যন্তরে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুনের পর এমনটা হয়নি। তবে অভিযোগ, মুজিব খুনের পরবর্তী সময়টি ছিল সেনা বাহিনির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। ঢাকায় রাষ্ট্রপতি নিবাস বঙ্গভবন ঘিরে যুযুধান দু’পক্ষ কামান ও বন্দুক নিয়ে মুখোমুখি। ক্ষমতা দখলের পালাবদলে সেই বিদ্রোহ সামলে জিয়াউর রহমান হন বাংলাদেশের সর্বময় শাসক।
জিয়াউর রহমান জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছিলেন। ১৯৭১ সালে পাক সেনার বিপক্ষে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ছিল, বঙ্গবন্ধুর বয়ানে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রেডিওতে পাঠ করেন।
জিয়া উর রহমানের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা বহু জামাত ইসলামি নেতার নিরাপত্তা দান, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে মর্যাদাপূর্ণ চাকরি দেওয়া। বিশ্ব জোড়া আলোচিত সপরিবারে মুজিবুর রহমান খুনের মামলায় এই সব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। মুজিব খুনে জড়িত সেনা কর্তারা বিভিন্ন সময়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টে মুজিবুর রহমানকে (Mujibar Rahaman) খুনের পর ইতিহাসের চাকা ঘুরেছিল ১৯৮১ সালের ৩০ মে-বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে। এই খুনের ঘটনায় জড়িত ১৮টি জন সেনা অফিসারের সামরিক আইন অনুযায়ী বিচার হয়। ১৩ জনের মৃত্যদণ্ড এবং বাকি ৫ জন বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটে।
১৯৮১-বাংলাদেশ ফের রাজনৈতিক মোড় নিল। শুরু হলো সামরিক জমানার সলতে পাকানো। সেই রঙ্গমঞ্চে হাজির অপর সেনাকর্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৩ সালে তিনি ক্ষমতা দখল করতেই শুরু হয় সামরিক শাসনের পর্ব। বকলমে চলতে থাকে এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির সরকার।
রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাতে এরপর বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে রক্তাক্ত আন্দোলন। সেই আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে উঠে আসেন প্রয়াত জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। রাজনৈতিক পালাবদলে বাংলাদেশ এরপর পায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
The post জিয়াউর রহমানের খুন বাংলাদেশে এনেছিল সামরিক জমানা appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/34xjDah
No comments:
Post a Comment