
সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ২০১৬ বিধানসভায় ২৬ টি আসন পেয়েছিল বামেরা। এবার ঝুলি একেবারে শূন্য। ব্রিগেডের ওই ভিড়ের পর কোথায় হারিয়ে গেল তাদের সমর্থন তা খুঁজতে হয়রান নেতারা। এমত অবস্থায় বাম সমর্থক যারা এই ভয়ংকর খারাপ ফলে ভেঙে পড়েছেন তাদের কী করা উচিৎ? শমীক লাহিড়ি বলছেন, জনগণকে গালমন্দ করে লাভ নেই। ধৈর্য ধরতে হবে। রাখতে হবে আত্মবিশ্বাস, যাতে চরম আঘাত লেগেছে বামেদের বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
২০১৬তে বামেরা পেয়েছিল ১৯.৭৫ শতাংশ ভোট। ২০১৯ এ তা কমে দাঁড়ায় সাত শতাংশ। ২০২১ এ তা আরও কমে সাকুল্যে ৪.৫%। ক্রমঅবনতি স্পষ্ট। ধস রোখা যাচ্ছে না কিছুতেই। ওই সাড়ে চার শতাংশের এখন কী করা উচিৎ? শমীক লাহিড়ীর কথায়, ‘মানুষ জাত-ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দিচ্ছে, বা চোরদের ভোট দিচ্ছে – এইসব কথা বলে তাদের সমালোচনা করাটা খুব সহজ, কিন্তু সেটা কমিউনিস্টদের কাজ হতে পারেনা।’
তিনি বলেছেন , ‘কেউ আনন্দিত, কেউ বিষণ্ণ, কেউ হতাশ – বামপন্থীরা শূণ্য হওয়ায়। কেউ ভাবছেন – ব্যস এবার শেষ করা গেছে। কেউ ভাবছেন আর কিছু হবেনা। কেউ রেগে গিয়ে গালমন্দ করছেন নেতাদের, কেউ বা ব্যঙ্গ করছেন। এসবের কোনটাই অস্বাভাবিক নয়।’
বাম সমর্থনের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি ইতিহাস টেনে এনে বলেছেন , ‘ইতিহাসকে কেমনভাবে দেখব, তার উপর নির্ভর করে প্রতিক্রিয়া। ই. এইচ কার নামে একজন ঐতিহাসিক বার বার বলতেন – ইতিহাসকে স্বল্প সময়ের নিরীখে বিচার করলে ভুল হবে। ইতিহাস মানে একটা লম্বা সময়। অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি মানেই সমাজের চূড়ান্ত অভিমুখ নয়। ইতিহাস বারেবারে নানা কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। কিন্তু অন্ধকারের বুক চিরেই আলো আসে। তবে হ্যাঁ কাল- মহাকালের হিসাবে তা ক্ষণস্থায়ী হলেও, পল-অনুপলের হিসাবে সময়টা নিঃসন্দেহে বড়। ইতিহাসের গহ্বরে হয়ত ১২/১৫ বছর মানে খুবই কম সময়, কিন্তু একজন ব্যক্তির জীবনে সময়টার মানে – সমগ্র কৈশোর বা যৌবন বা প্রৌঢ়ত্ব।’ তাই লম্বা লড়াইতে ধৈর্য্য হারানো অস্বাভাবিক নয়, সাধারণ মানুষের। কিন্তু আমরা বামপন্থী কর্মীরা কি বুঝতে চাইবো না ইতিহাসের গতিধারা!’
আমাদের এখানেও জাত-ধর্মের মেরুকরণ প্রবলভাবেই ঘটছে, যা বাংলায় ছিলনা, গোটা দেশে থাকলেও। তৃণমূল-বিজেপি এই কাজে আপাতভাবে অনেকটাই সফল। তাই অন্ধকারে লড়াই চালানো কঠিন, খুবই কঠিন। জাত-ধর্ম-তোলাবাজি-কাটমানি-কমিশনের নেশায় নেশাচ্ছন্ন সমাজের সামনে রুটিরুজি, জীবন-জীবিকার লড়াই তুলে ধরতে গেলে, কঠিন দীর্ঘস্থায়ী লড়াই এর প্রয়োজন। ধৈর্য লাগে অনেক।’
তাঁর কথায় ‘অনেকেরই স্বাভাবিক প্রশ্ন – বামেরা কী করছে? কেন আটকাতে পারছে না? কেন বোঝাতে পারছে না? আমার মনে হয়, মানুষের অভিজ্ঞতায় আসতে হবে এই বিপদ, অপরদিকে মাটি কামড়ে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। কোনও শর্টকার্ট রাস্তা নেই। রুটিরুজি, জীবন-জীবিকার লড়াই মানুষের অস্তিত্বের সাথে যুক্ত, তাই এই লড়াই সামনের সারিতে আজ-কাল-পরশু আসবেই। কেউ আটকাতে পারবেনা। কিছুটা সময়ের জন্য হয়ত বা আটকে দিতে পারে। এই আটকের যাওয়া সময়টা খুব কঠিন, খুব অন্ধকার । এই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা এখন চলছি।’
শমীকবাবু বলেছেন ,’অনেকে ৩৪ বছরের সরকারটাকেই শুধু দেখেন। কিন্তু এর পেছনে দীর্ঘ ৫০ বছরের রক্ত-ঘাম-অশ্রু- আত্মত্যাগের এক বিশাল ইতিহাস আছে। কেউ জিতে গেলেই চুরি-দাঙ্গা-কাটমানি সব আইনসিদ্ধ হয়ে যায়না। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব মিথ্যা হয়ে যায় না। কেউ বিরোধী দল হ’য়ে গেলেই তার হাত থেকে দাঙ্গার চক্রান্তের রেখা মুছে যায় না। মানুষকে জাত-ধর্ম-ভাষার নামে ভাগ করার চক্রান্তও ঢাকা পড়ে যায়না। তাই আমাদের মানুষের দাবি নিয়ে লড়াই চালিয়েই যেতে হবে। বিপন্ন অসহায় মানুষের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়াবার কাজে বিরতি টানার প্রশ্নই ওঠেনা। বরং তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন করার কাজ ক্লান্তিহীন ভাবেই চালিয়ে যেতে হবে। কাল-পরশু হয়তো বা প্রকৃতির নিয়মেই আমাকে চলে যেতে হতে পারে, কিন্তু ব্যাটনটা যোগ্যতরদের হাতে তুলে দিয়ে। লড়াই লড়তে লড়তেই মুক্তির রাস্তার ঠিকানা ঠিক খুঁজে পাওয়া যাবেই।
স্পার্টাকাস জিতেছিল না হেরেছিল? ধৈর্য্য ধরে দেখলে ইতিহাস বলবে স্পাটাকাসেরা জিতেছিল। তাই চাই ধৈর্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা আর আত্মবিশ্বাস।’
The post সাড়ে চার শতাংশ বামের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে বিশেষ দাওয়াই শমীকের appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/3b0ujlo
No comments:
Post a Comment